প্রায় বসন্ত শেষ হওয়ার সময়্, গরম এলো বলে। গ্রীষ্ম তার অনেক গরম নিয়ে আসার আগেই বেশ গরম পড়তে শুরু করেছে । এই গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ আর ভ্যাপসা একটা গরম আবহাওয়া, আমাদের সহ্যের সীমা মাঝে মাঝে ছাড়িয়ে যায়। এরকম অসহ্য গরমে একটু স্বস্তি পাওয়ার জন্য আমরা যদি একটা এসি কিনার কথা চিন্তা করি তবে আইডিয়াটা খুব একটা খারাপ না। আপনি যদি টাকা নিয়ে কাছের কোনো ইলেকট্রনিক্স দোকানে যাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার এসি সম্পর্কে ন্যূনতম কিছু বিষয় জেনে রাখলে ভালো হয় , কারন এসি কেনার সময় আপনি এতো কোম্পানির আলাদা আলাদা মডেল দেখে হয়ত বুঝেই উঠতে পারবেন না কোন মডেল কেনা আপনার জন্য জরুরি। এসি কেনার আগে দেখে নিন কোন বিষয়গুলো মনে রাখা আপনার জন্য দরকার… এসি কাজকরে কীভাবে ?
আসলে আমরা কনফিউশন নিয়ে যেমনটা চিন্তা করি, এসির চালানো ও কাজ করার ধরণ বলতে গেলে তার চেয়েও অনেক সহজ। এক কথায় বলতে গেলে এসি ১টি রুমের ভিতর থেকে বাতাস টেনে নেয়, পরে ওই বাতাসকে একটি ইভাপোরেটর (evaporator) বা বাষ্পীভবন যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে চালিয়ে বাতাসটিকে ঠান্ডা করে এবং সবশেষে ঠান্ডা বাতাসগুলো পরিমাণ মত রুমে ছেড়ে দেয়।
অনেক মানুষের মধ্যেই একটি ভুল ধারণা আছে যে এয়ার কন্ডিশনার রুমের বাইরের থেকে বাতাস টেনে আনে, কিন্তু সত্যি বলতে গেলে একটি এয়ার কন্ডিশনার সব সময় শুধুমাত্র ঘরের ভেতরের বাতাস নিয়ে কাজ করে থাকে। একটি এয়ার কন্ডিশনার এ ইভাপোরেটর (evaporator) এর পাশাপাশি থাকে কম্প্রেসার (compressor) , যেখানে কুলিং (cooling) গ্যাসটিকে ঠান্ডা করে দেয় , আর এই ঠান্ডা কুলিং গ্যাসটিই পরে রুমের ভেতর থেকে নেয়া গরম বাতাসকে ঠান্ডা করে।
বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কারের সাথে সাথে আমরা দৈনন্দিন ব্যবহারের ইলেক্ট্রিক্যাল জিনিসে আরো উন্নত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি । বর্তমান সময়ে নতুন ইনভার্টার (inverter) এসিগুলো বাজারে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর সেই সাথে সেগুলো বহুল প্রচলিত নন ইনভার্টার (non inverter) এসিগুলোর থেকে ঠিক কতটা ভালো বা উন্নত সেই প্রশ্নও সাধারন ভাবে আমাদের সবার মনেই উঠে আসে। তাহলে চলুন জানি এই সম্পর্কেঃ
একটি নন ইনভার্টার (non inverter) এসিতে এর কম্প্রেসার (compressor) টি একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলতে থাকে, এর মানে এই যে কম্প্রেসার(compressor) টি যদি আমরা চালু রেখে দেই রুমের ভেতরের তাপমাত্রা ক্রমাগত শুধু কমতেই থাকবে। কিন্তু যে ব্যবহার করবে তার পছন্দ অনুযায়ী যদি নির্ধারণ করা হয় তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য, তখন এসিটি ঠান্ডা হয়ে কিছুটা বেশি হয়ে গেলেই এর কম্প্রেসার (compressor) টি বন্ধ করে দেয়, আবার রুমে গরম কিছুটা বেড়ে গেলে আবার কম্প্রেসার (compressor) টি কে চালু করে দেয়। এই অটো অন অফ হওয়ার পদ্ধতি পুরোপুরি একজন ব্যবহারকারীর সেটিংস বা নির্ধারিত তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
অপর দিকে একটি ইনভার্টার (inverter) এসিতে এর কম্প্রেসার (compressor) যতক্ষণ চালু থাকে সবসময় চলতেই থাকবে, আর পছন্দের তাপমাত্রা ধরে রাখার জন্য কম্প্রেসার(compressor)টি সম্পূর্ণ অফ না করে দিয়ে এসিটির তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়াতে বা কমাতে হবে । বলতে গেলে রুমে একদম পারফেক্ট ভাবে একই তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য ইনভার্টার (inverter) এসিগুলোই সবচেয়ে বেশি ভালো কাজ করে। আর সেজন্যই রুমের তাপমাত্রার সামান্যতম পরিবর্তনেই যেসব ব্যক্তিদের সমস্যা হয়, তাদের জন্যও ইনভার্টার (inverter) এসিই সবথেকে সেরা। আর কয়েক মিনিট পর পর যদি আপনি একটি শক্তিশালী কম্প্রেসার(compressor) কে সম্পূর্ণ বন্ধ ও চালু করার প্রয়োজন না পরে তখন এই এসি গুলো অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ করে থাকে।
দু ধরণের এসির মধ্যে নিচের তুলনামূলক তালিকাটি দেখুন ।
ইনভার্টারএসিঃ
সুবিধা
অসুবিধা
ইনভার্টার এসি পরিবেশ বান্ধব
ইনভার্টার এসি এনার্জি বা শক্তি বাঁচানোর জন্য ধীরগতিতে ঠান্ডা
করে।
ইনভার্টার এসি অল্প বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বলে ব্যবহারের খরচ অনেক কমে যায়।
ইনভার্টার এসি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে তুলনামূলক ভাবে অনেক
বেশি খরচ হয়।
ইনভার্টার এসি শব্দ হয় খুবই কম নয়ত একেবারেই নিঃশব্দ।
ইনভার্টার এসির দাম নন ইনভার্টার এসির সাথে যদি আমরা তুলনা করি, তাহলে দেখতে পাবো যে, এদের দামও
এসি কেনার আগে প্রথম প্রশ্ন যেটি মাথায় আসে তা হল স্প্লিট এসি (split ac) নাকি উইন্ডোএসি (window ac)? উইন্ডোএসি (window ac) তে বন্ধ হয়ে যাবে আপনার একটি জানলা। আর এসি বন্ধ থাকলে ঘরে আলো ঢোকার সম্ভবনা কমে যাবে। অন্যদিকে স্প্লিট এসি (split ac) তে কম্প্রেসার(compressor) টি থাকবে ঘরের বাইরে। তাই ঘরে আমাদের পছন্দমত জায়গায় এই এসি সেট করে নিতে পারবো। কিন্তু একটা বিষয় আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কমপ্রেশার এর সাথে সংযোগ দেয়ার জন্য আমাদের বাসার দেয়ালে ছোট একটি গর্ত করার প্রয়োজন পড়তে পারে । এছাড়াও যেহেতু স্প্লিট এসি (split ac) তে কম্প্রেসার(compressor) টি ঘরের বাইরে থাকে তাই আওয়াজ অনেক কম হয় স্প্লিট এসি (split ac) তে। যদিও দামের দিক থেকে উইন্ডো এসি (window ac) দাম স্প্লিট এসি (split ac) থেকে খানিকটা কম।
BEE (Bureau of Energy Efficiency)স্টাররেটিং এসি কেনার আগে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার BEE (Bureau of Energy Efficiency) স্টার রেটিং। কোন ইলেকট্রিকাল ডিভাইস কতো বিদ্যুত ব্যবহার করে তা বিচার হয় এই BEE (Bureau of Energy Efficiency) স্টার রেটিং দিয়ে।
১ স্টার ডিভাইস এক বছরে ব্যবহার করে ৮৪৩ ইউনিট অন্যদিকে ৫ স্টার ডিভাইস ব্যবহার করে ৫৫৪ ইউনিট। এখানে মাথায় রাখা প্রয়োজন স্টার রেটিং ক্রমশ বদলাতে থাকে। ২০১৬ সালে যে এসিটি ৫ স্টার ছিল এখন ২০১৮ সালে তা ৩ স্টার এসি।